উমর ফারুক (কাজী নজরুল ইসলাম)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | NCTB BOOK
14.9k
Summary

এই কবিতায় মুহাম্মদ উমর (ফারুক) এর নেতৃত্বের গুণাবলী, তার মানবপ্রেম এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আনুগত্য তুলে ধরা হয়েছে।

তিনি জীবনের সব কষ্টের পরেও সমগ্র জাতির সেবা করেছেন এবং খলিফা হিসেবে নিজের সুখের চেয়ে অন্যদের সুখকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

তাঁর সিদ্ধান্ত এবং আচরণে মানুষের প্রতি Compassion এবং সহানুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে, যেমন hunger-stricken শিশুদের জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া।

এই কবিতায় উমরের শাসন এবং তাঁর ত্যাগের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তিনি আরাম ও ভোগের প্রয়োজনে না থেকে মানুষের সেবা করেছেন।

এছাড়াও, কবিতায় তাঁর শাসনকালের সময়কার নানা ঘটনার বর্ণনা আছে, যা তাঁর মহান ব্যক্তিত্ব ও শান্তির প্রতি প্রবণতা নির্দেশ করে।

তিমির রাত্রি-‘এশা’র আযান শুনি দূর মসজিদে ।

প্রিয়-হারা কার কান্নার মত এ-বুকে আসিয়া বিঁধে

             আমির-উল-মুমেনিন,

তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন ।

তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি,

বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কি-রে গগনে মরুর শশী ?

ও-আযান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান?

মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্বান ?

           আবার লুটায়ে পড়ি।

“সেদিন গিয়াছে”-শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি।

উমর! ফারুক! আখেরী নবীর ওগো দক্ষিণ-বাহু!

আহ্বান নয় - রূপ ধরে এস - গ্রাসে অন্ধতা - রাহু!

ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন!

সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ!

শুধু আঙ্গুলি হেলনে শাসন করিতে এ জগতের

দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের

ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের

ধরি আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি!

ইসলাম-সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি ?

পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি ।

আজ বুঝি—কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর-

মোর পরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর।'

************************************************

অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধূলার তখতে বসি

খেজুর পাতার প্রাসাদ তোমার বারে বারে গেছে খসি

সাইমুম-ঝড়ে। পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক‘নুয়ে,

ঊর্ধ্বের যারা-পড়েছে তাহারা, তুমি ছিলে খাড়া ভুয়ে ।


শত প্রলোভন বিলাস বাসনা ঐশ্বর্যের মদ

করেছে সালাম দূর হতে সব ছুঁইতে পারেনি পদ ।

সবারে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া তুমি ছিলে সব নিচে,

বুকে করে সবে বেড়া করি পার, আপনি রহিলে পিছে ।
               হেরি পশ্চাতে চাহি-

তুমি চলিয়াছ রোদ্রদগ্ধ দূর মরুপথ বাহি

জেরুজালেমের কিল্লা যথায় আছে অবরোধ করি

বীর মুসলিম সেনাদল তব বহু দিন মাস ধরি।

দুর্গের দ্বার খুলিবে তাহারা বলেছে শত্রু শেষে-

উমর যদি গো সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করে এসে!

হায় রে, আধেক ধরার মালিক আমির-উল-মুমেনিন

শুনে সে খবর একাকী উষ্ট্রে চলেছে বিরামহীন

সাহারা পারায়ে! ঝুলিতে দু খানা শুকনো ‘খবুজ' রুটি

একটি মশকে একটুকু পানি খোমা দু তিন মুঠি ।

প্রহরীবিহীন সম্রাট চলে একা পথে উটে চড়ি

চলেছে একটি মাত্র ভৃত্য উষ্ট্রের রশি ধরি!

মরুর সূর্য ঊর্ধ্ব আকাশে আগুন বৃষ্টি করে,

সে আগুন-তাতে খই সম ফোটে বালুকা মরুর পরে ।

কিছুদুর যেতে উট হতে নামি কহিলে ভৃত্যে, “ভাই

পেরেশান বড় হয়েছ চলিয়া! এইবার আমি যাই

উষ্ট্রের রশি ধরিয়া অগ্রে, তুমি উঠে বস উটে,

তপ্ত বালুতে চলি যে চরণে রক্ত উঠেছে ফুটে।”


                            ..ভৃত্য দস্ত চুমি

কাঁদিয়া কহিল, ‘উমর! কেমনে এ আদেশ কর তুমি?

উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া গোলাম রহিবে বসি

আর হেঁটে যাবে খলিফা উমর ধরি সে উটের রশি ?

                 খলিফা হাসিয়া বলে,

“তুমি জিতে গিয়ে বড় হতে চাও, ভাই রে, এমনি ছলে ।

রোজ-কিয়ামতে আল্লাহ যে দিন কহিবে, ‘উমর! ওরে

করে নি খলিফা, মুসলিম-জাঁহা তোর সুখ তরে তোরে।'

উমর ফারুক
কী দিব জওয়াব কী করিয়া মুখ দেখাব রসুলে ভাই ।

আমি তোমাদের প্রতিনিধি শুধু। মোর অধিকার নাই ।

আরাম সুখের, - মানুষ হইয়া নিতে মানুষের সেবা ।

ইসলাম বলে, সকলে সমান, কে বড় ক্ষুদ্র কেবা ।

ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি,

মানুষেরে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী ।

জানি না, সেদিন আকাশে পুষ্প বৃষ্টি হইল কিনা,

কী গান গাহিল মানুষে সেদিন বন্দি' বিশ্ববীণা ।

জানি না, সেদিন ফেরেশতা তব করেছে কি না স্তব-

অনাগত কাল গেয়েছিল শুধু, ‘জয় জয় হে মানব ৷'

************************************************

তুমি নিৰ্ভীক, এক খোদা ছাড়া করনি ক' কারে ভয়,

সত্যব্রত তোমায় তাইতে সবে উদ্ধত কয় ।

মানুষ হইয়া মানুষের পূজা মানুষেরি অপমান,

তাই মহাবীর খালেদেরে তুমি পাঠাইলে ফরমান,

সিপাহ-সালারে, ইঙ্গিতে তব করিলে মামুলি সেনা,

বিশ্ব-বিজয়ী বীরেরে শাসিতে এতটুকু টলিলে না ।

************************************************

মানব-প্রেমিক! আজিকে তোমারে স্মরি,

মনে পড়ে তব মহত্ত্ব-কথা-সেদিন সে বিভাবরী

নগর-ভ্রমণে বাহিরিয়া তুমি দেখিতে পাইলে দূরে

মায়েরে ঘিরিয়া ক্ষুধাতুর দুটি শিশু সকরুণ সুরে

কাঁদিতেছে আর দুঃখিনী মাতা ছেলেরে ভুলাতে হায়,

উনানে শূন্য হাঁড়ি চড়াইয়া কাঁদিয়া অকূলে চায় ৷

শুনিয়া সকল-কাঁদিতে কাঁদিতে ছুটে গেলে মদিনাতে

বায়তুল-মাল হইতে লইয়া ঘৃত আটা নিজ হাতে,

বলিলে, ‘এ সব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের' পরে,

আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে।'

কত লোক আসি আপনি চাহিল বহিতে তোমার বোঝা,

বলিলে, বন্ধু, আমার এ ভার আমিই বহিব সোজা !

রোজ-কিয়ামতে কে বহিবে বল আমার পাপের ভার?

মম অপরাধে ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদিয়াছে, আজি তার

প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি'- চলিলে নিশীথ রাতে

পৃষ্ঠে বহিয়া খাদ্যের বোঝা দুখিনীর আঙিনাতে!

                        এত যে কোমল প্ৰাণ,

করুণার বশে তবু গো ন্যায়ের করনি কো অপমান!

মদ্যপানের অপরাধে প্রিয় পুত্রেরে নিজ করে

মেরেছ দোর্রা, মরেছে পুত্র তোমার চোখের পরে

ক্ষমা চাহিয়াছে পুত্র, বলেছ পাষাণে বক্ষ বাঁধি-

‘অপরাধ করে তোরি মত স্বরে কাঁদিয়াছে অপরাধী।'

                      আবু শাহমার গোরে

কাঁদিতে যাইয়া ফিরিয়া আসি গো তোমারে সালাম করে ।

খাস দরবার ভরিয়া গিয়াছে হাজার দেশের লোকে,

‘কোথায় খলিফা’ কেবলি প্রশ্ন ভাসে উৎসুক চোখে,

একটি মাত্র পিরান কাচিয়া শুকায়নি তাহা বলে,

রোদ্রে ধরিয়া বসিয়া আছে গো খলিফা আঙিনা-তলে ।

হে খলিফাতুল-মুসলেমিন! হে চীরধারী সম্রাট!

অপমান তব করিব না আজ করিয়া নান্দী পাঠ,

মানুষেরে তুমি বলেছ বন্ধু, বলিয়াছ ভাই, তাই

তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই ।

                                                      (সংক্ষেপিত)

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

শফিক সাহেব প্রতি শুক্রবার বস্তিবাসী দুস্থ লোকদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করেন। তিনি নিয়মিত বস্তিবাসীর খোঁজখবরও নেন। বস্তিবাসীর নানা রকম অসুবিধায়ও তিনি সমাধান দিয়ে থাকেন। বস্তির কেউ অন্যায় করলেও তাকে কঠোর শাস্তি দেন।

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

'সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।'

অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধূলার তখতে বসি
উষ্ট্রের পিঠে আরাম করিয়া রহিবে বসি
আমি লয়ে যাব বহিয়া এ-সব দুখিনী মায়ের ঘরে
তোমারে এমন চোখের পানিতে স্মরি গো সর্বদাই
উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও

একজন ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভীক ও গণতন্ত্রমনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি চির অম্লান। রিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের খলিফা হয়েও তিনি রাজসিংহাসনে বসেননি। তিনি রাজ্য পরিচালনা করতেন খেজুর পাতার চাটাইয়ে বসে।

মহানবি হজরত মুহম্মদ (স)
সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা)
হজরত উমরের পুত্র আবু শাহমা

কবি পরিচিতি

1k

কাজী নজরুল ইসলাম ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ সনে (২৪শে মে ১৮৯৯ সালে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। পরে বর্ধমানে ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। সেখানেই তাঁর সাহিত্য-জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর লেখায় তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তাঁকে 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয়। বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁর আবির্ভাব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। আরবি-ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার তাঁর কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে কবি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অসুস্থ কবিকে ঢাকায় আনা হয় এবং পরে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। তাঁকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয় । তাঁর অসাধারণ সাহিত্য-কীর্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্ৰদান করে। তাঁর রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে অগ্নি-বীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়শিখা, চক্রবাক, সিন্ধুহিন্দোল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি তাঁর রচিত গল্প ও উপন্যাস । যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী ও রাজবন্দীর জবানবন্দী তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ । ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে কবি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ-সংলগ্ন প্রাঙ্গণে তাকে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়
সমাহিত করা হয় ।

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

767

তাপ- উত্তাপ। হস্ত- হাত। পেরেসান- বিপর্যস্ত, ক্লান্ত। আমির উল-মুমেনিন - বিশ্বাসীদের নেতা, এখানে বিশেষভাবে বোঝানো হয়েছে মুসলামানদের ধর্মীয় প্রধান ও রাষ্ট্রীয় নেতা হযরত উমর (রা) কে । মুয়াজ্জিন- যিনি আযান দেন। তকবির-‘আল্লাহ' ধ্বনি বা রব। আখেরি- শেষ। পরশমণি - স্পর্শমণি, যার ছোঁয়ায় লোহাও সোনা হয়। তখত- সিংহাসন। সাইমুম- শুকনো উত্তপ্ত শ্বাসরোধকারী প্রবল হাওয়া- বিশেষত মরুভূমির হাওয়া। মশক- পানি বইবার চামড়ার থলে। দোর্রা- চাবুক। চীর- ছিন্ন বস্ত্র । পিরান- জামা। নান্দী- স্তুতি। কাব্যপাঠ বা নাটকের শুরুতে ছোট করে মঙ্গলসূচক প্রশস্তি পাঠ। শমসের- তরবারি। দস্ত-হাত। পেরেশান- বিপর্যস্ত, ক্লান্ত ।

উমর ফারুক- ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। তাঁর খেলাফতের সময়কাল দশ বছর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর শাসনামলে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমা আরব সাম্রাজ্য থেকে মিশর ও তুর্কিস্থানের সীমা পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একজন ন্যায়নিষ্ঠ, নির্ভীক ও গণতন্ত্রমনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি চির অম্লান। ‘ফারুক’ হযরত উমরের উপাধি। যিনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন তাঁকেই ‘ফারুক’ বলা হয়। হযরত উমর (রা.) ছিলেন সত্যের একজন দৃঢ়চিত্ত উপাসক ৷

‘তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন’- হযরত উমরের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বে নামাজের জন্য প্রকাশ্য আজান দেয়ার রীতি ছিল না। কোরেশদের ভয়ে মুসলমানরা উচ্চরবে আজান দিতে সাহস পেত না। উমর ছিলেন কোরেশ বংশোদ্ভূত শ্রেষ্ঠবীর । তিনি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন, তখন প্রকাশ্যে আজান দিতে আর কোনো বাধা রইল না। তাই আজানের সঙ্গে যে উমরের স্মৃতি বিজড়িত সে কথা অনেক মুয়াজ্জিন জানে না ।

জেরুজালেম- ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি প্রাচীন শহর জেরুজালেম।

আবু শাহামা- হযরত উমরের পুত্র। মদপানের অপরাধে খলিফা তাকে ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন এবং নিজেই বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাতের ফলে আবু শাহমার মৃত্যু হয় ।

Content added || updated By

পাঠ পরিচিতি

811

উমর ফারুক কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের জিঞ্জীর কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটিতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা)-এর জীবনাদর্শ, চরিত্র-মাহাত্ম্য, মানবিকতা এবং সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। খলিফা উমর (রা) ছিলেন একজন মহৎ ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্রে একাধারে বীরত্ব, কোমলতা, নিষ্ঠা এবং সাম্যবাদী আদর্শের অনন্য সমন্বয় ঘটেছিল। বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হয়েও তিনি অতি সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবন যাপন করেছেন। নিজ ভৃত্যকেও তিনি তাঁর সঙ্গে সমান মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হননি। ন্যায়ের আদর্শ সমুন্নত রাখতে তিনি আপন সন্তানকে কঠোরতম শাস্তি দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি । তিনি ছিলেন আমির-উল-মুমেনিন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে আদর্শবান ব্যক্তিত্ব বলে বিশ্বাস করেই বলেছিলেন, তাঁর পরে যদি কেউ নবি হতেন, তাহলে তিনি হতেন উমর । মহৎপ্রাণ ও আদর্শ মানব চরিত্র অর্জনের জন্য উমর ফারুককে কবি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে কবিতায় উপস্থাপন করেছেন।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...